Aug 18, 2021

নিরাপনের অগ্রযাত্রা

নিরাপনের অগ্রযাত্রা

অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেইফটি সংগঠন যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই নিরাপনের যাত্রা শুরু। পাঁচ বছর আগে শুরু হওয়া অ্যালায়েন্সের স্থায়িত্ব আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। অ্যালায়েন্সের মূল লক্ষ্য ছিল এর ২৯টি মেম্বার ব্র্যান্ডের ৬৫৪টি পোশাক ফ্যাক্টরির ফিজিক্যাল সেইফটি ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ ও প্রতিকারের উপায় দিয়ে সহযোগিতা করা। এর পাশাপাশি আরও কিছু কার্যক্রমও ছিল, যেমন ফ্যাক্টরিতে নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া, একটি হেল্পলাইন স্থাপনার মাধ্যমে শ্রমিকদের মতামত জানার একটি ব্যবস্থা করা এবং শ্রমিক নিরাপত্তা কমিটি স্থাপন করা। তবে মূল লক্ষ্য ছিলো প্রতিটি ফ্যাক্টরিতে নিরাপত্তা সুবিধা নিশ্চিত করা।

অ্যালায়েন্সের কার্ক্রম বন্ধ হওয়ার সময় ৪২৮টি ফ্যাক্টরি তাদের সংশোধনমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সব ধরনের ম্যাটিরিয়াল বন্ধ করে দেয়। বাকি ফ্যাক্টরিগুলোর কিছু অ্যাকর্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল (এবং অ্যাকর্ডের পদ্ধতিতে কাজ করছিল) এবং অন্য ফ্যাক্টরিগুলো দেরিতে অ্যালায়েন্সের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করে এবং তখনো তাদের ক্যাপ ক্লোজড হয়নি। ফ্যাক্টরিগুলো ক্যাপ ক্লোজড হওয়ার পর একটি চলমান রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি নিশ্চিত করে নিরাপন। যার মাধ্যমে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ পরিচালিত হচ্ছে কি না তা নিয়েই কাজ করে নিরাপন।

অ্যালায়েন্স এবং নিরাপন – দুই জায়গাতেই দুটি নাম সবসময় সংযুক্ত আছে – এলিভেট এবং পল রিগবি। এলিভেট বাংলাদেশে স্থানীয় অ্যালায়েন্স কার্যক্রম তৈরি ও পরিচালনা করে এবং নিরাপনের ক্ষেত্রেও একই ভূমিকা পালন করছে। অ্যালায়েন্সের কার্ক্রমের তৃতীয় বছরে পল রিগবি চিফ সেইফটি অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। নিরাপন ১.০-এরও একজন উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। বর্তমানে নিরাপন ২.০-এর সিইও এবং চিফ সেইফটি অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।

বাংলাদেশে বিইএফএস-এর অগ্রগতি, আমাদের বর্তমান অবস্থান, এবং নিরাপন ও পুরো ইন্ডাস্ট্রির পরবর্তী ইতিবাচক ধাপগুলো সম্পর্কে পলের মতামত জানার জন্য আমরা তাঁর সঙ্গে আলাপ করি।

১. বাংলাদেশর নির্মাণ, বৈদ্যুতিক এবং অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা পরিবর্তিত হয়েছে?

বিল্ডিং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ফায়ার সেইফটি (বিইএফএস) সারা বাংলাদেশে অ্যালায়েন্স এবং অ্যাকর্ডের কাজ অনুসরণ করে উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছে, যা অন্যান্য সরকারি, এনজিও, এবং বেসরকারি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান-স্পন্সর প্রকল্পগুলির সঙ্গে নিরাপদ ভবন তৈরি করতে, ধসের সম্ভাবনা কমাতে এবং বৈদ্যুতিক অগ্নিকাণ্ড রোধ করতে সহায়তা করে। এখন শেষ কাজটি হচ্ছে নিশ্চিত করা যে, আগুন যদি লাগেও, তা যেন এর উৎসেই নেভানো যায় এবং শ্রমিকরা যেন সহজেই সেখান থেকে সরে যেতে পারেন, তার জন্য কিছু নিয়মনীতি ও ব্যবস্থা তৈরি করা। তবে এখনও কিছুটা পথ বাকি আছে। বাংলাদেশে প্রকৌশল দক্ষতায় এখনও উন্নয়ন প্রয়োজন। অনেক ইঞ্জিনিয়ারই বিধিনিষেধগুলো জানেন, কিন্তু এই বিধিনিষেধগুলো কেন আছে বা কী কাজে লাগে, সে বিষয়গুলো অনেকেই বোঝেন না এবং এর ফলে এই বিধিনিষেধগুলো কীভাবে এড়ানো যায় কিছু লোকজন তা খুঁজতে থাকে। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে রাসায়নিক উপাদানের সংরক্ষণ ব্যবস্থা।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণের শ্রেণীবিন্যাসটা লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে বিইএফএস-এর কাজটি প্রকৌশল নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পড়ে। তার মানে হচ্ছে, আমরা ঝুঁকি কমানোর জন্য বিল্ডিংয়ে প্রকৌশল নিরাপত্তায় সমাধান রেখেছি। এটা মনে রাখতে হবে যে, বিইএফএস-এর কাজ পুরো নিরাপত্তা কাজের একটি অংশ মাত্র। গ্যারেজে পার্ক করে রাখা একটি গাড়ির কথা ধরুন। গাড়িটি নিরাপদ অবস্থায় আছে, গাড়িটিতে সব ধরনের আধুনিক প্রকৌশল প্রযুক্তি আছে। কিন্তু গাড়িটির যদি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয়, তাহলে এটা কি নিরাপদ থাকবে? যদি ড্রাইভার বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালায় বা চালানোর সময়ে আইন ভঙ্গ করে, আমরা কি তখনো বলবো যে গাড়িটি নিরাপদ আছে? নিয়ন্ত্রণের এই শ্রেণীবিন্যাসটা নিয়েই এখন কথা বলা যাক।

২। ফ্যাক্টরিগুলোর বর্তমান অবস্থা কি?

প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যে ফ্যাক্টরিগুলো বিশ্বাস করতো যে ক্যাপ ক্লোজই নিরাপত্তার শেষ কথা। পুরো ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের ও বাইরের অনেকেই তাই বিশ্বাস করতেন। সবাই ক্যাপ ক্লোজ-কেই একমাত্র সমাধান হিসেবে ধরে নিতেন। কিন্তু আসলে এটি সমাধানের একটি অংশমাত্র। ক্যাপ ক্লোজের মাধ্যমে একটি ফ্যাক্টরি তার নিরাপত্তা ব্যবস্থার সূচনা করে। আমরা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের শ্রেণীবিন্যাসের দিকে আবারো তাকালে ব্যাপারটা আরও সহজে বুঝতে পারব।

প্রকৌশলবিদ্যা বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম কথা হচ্ছে যে কোনো পদ্ধতি বা কাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন হয়। একটি ভবনও এক সময় পুরনো হয়ে যায়। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, যন্ত্রপাতি, ফায়ার অ্যালার্ম – এসবই নিয়মিত ব্যবহারের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। ক্যাপ ক্লোজের পর থেকে ফ্যাক্টরিগুলো এসবের রক্ষণাবেক্ষণ করেনি এবং তাই আমরা এর অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ফ্যাক্টরিগুলোর সঙ্গে কাজ করছি, এবং পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাদের চিন্তাধারা পরিবর্তনের জন্যও কাজ করে আসছি।

ফ্যাক্টরিতে কর্মরত মানুষদের প্রয়োজন প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার সাথে কাজ করা। ফ্যাক্টরি চালানো একটি দুরূহ বিষয়, এবং এর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পরিবেশের সুষ্ঠু নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও প্রয়োজন সমন্বিত ও সুচিন্তিত সমাধান।

প্রতিরোধমূলক রক্ষণাবেক্ষণ এক্ষেত্রে জরুরী। এটি সাশ্রয়ী এবং শুধুমাত্র নিরাপত্তা নয়, বরং ব্যবসার জন্যও উপযোগী।

৩। আমাদের ফ্যাক্টরিগুলোতে কী ধরনের বিপদের আশঙ্কা ও ঝুঁকি আছে এবং এসব হ্রাসে আমরা কীভাবে ম্যানেজারদের সহযোগিতা এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছি?

প্রথমে আমাদের জানতে হবে বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ বলতে আমরা কি বুঝি।

বয়লার, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, রাসায়নিক দ্রব্য, কাঁচামাল এবং প্রস্তুতকৃত পণ্য, এবং আরও অনেক কিছুই বিপজ্জনক। এ সবকিছুই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপদ ডেকে আনতে পারে, সুতরাং আমরা কীভাবে এসব থেকে সম্ভাব্য বিপদ ও ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাস করতে পারি? কোথা থেকে শুরু করতে হবে? ফ্যাক্টরিতে উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়া এবং এর বিভিন্ন ধাপে কেন এসব বিপজ্জনক বস্তু কর্মস্থলে থাকা প্রয়োজন, তার বিশ্লেষণ থেকে আমরা শুরু করতে পারি। এখানে মনে রাখতে হবে যে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোনও আলাদা বিষয় নয়, বরং পুরো প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কীভাবে এই কাজটি করা যায়? ফ্যাক্টরির প্রতিটি কাজের প্রক্রিয়ায় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় শ্রেণিবিন্যাস করে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই করা যেতে পারে। আমরা এটাকে “সেইফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম” বা ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি’ বলবো।

এখন আমরা প্রচলিত ধারার বাইরে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পুরো ব্যাপারটি দেখব । সমস্যা হলো, আমরা সবসময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর বিপদের ঝুঁকির দিকে নজর দেই। ঝুঁকি বিশ্লেষণের নিয়মে এটা একটি সমস্যা, কারণ এতে করে অন্যান্য সম্ভাব্য সব বিপদ থেকে সবার দৃষ্টি সরে যায়, সেগুলোকে তখন আর বিপদ হিসেবে ধরা হয় না (কারণ তখনও কোনও দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়নি)। রাসায়নিক পদার্থ সবসময়েই বিপজ্জনক, ঠিক যেমন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং বয়লার। বিপজ্জনক হলেও এগুলোকে তো আর বাদ দেওয়া যাবে না, তাই এদের ক্ষেত্রে আমাদের সবসময়ই সজাগ থাকতে হবে, এবং উপযুক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আগেভাগেই নিতে হবে।

সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কিত এমন চিন্তাধারা পরিবর্তনের জন্য গ্রাউন্ড মনিটরিং পার্টনার এলিভেট এবং প্রশিক্ষণ পার্টনার ব্র্যাক-এর সঙ্গে মিলে নিরাপন ফ্যাক্টরি মালিক ও ম্যানেজারদের এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষা ও সহযোগিতা দেয় এবং তাদের বর্তমান ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এক্ষেত্রে নিরাপন সামগ্রিকভাবে যা বলতে চায়, তা হলো নিম্নরূপ-

ম্যানেজারদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণ ম্যানেজারদেরকে তাদের কর্মস্থলের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরিতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান প্রদান করে।

নাইনটি ডে ম্যানেজমেন্ট গাইডেন্স অ্যান্ড রিপোর্টিং প্রসেস (নাইনটি ডে রিপোর্ট)। এটি ফ্যাক্টরি ম্যানেজারদেরকে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার একটি ফ্রেমওয়ার্ক দেয়। এর মাধ্যমে তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও সামগ্রিক একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা ম্যানেজারদের জন্য সহজ হয় । এরপর ফ্যাক্টরি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও জোরদার করার জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রমাণসহ একটি রিপোর্ট জমা দেয়। আমরা রিপোর্টটি বিশ্লেষণ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন সম্ভব, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় মতামত দেই।

সেইফটি সাপোর্ট ভিজিট (এসএসভি)। নাইনটি ডে রিপোর্টের কার্যকারিতা ও প্রয়োগের বাস্তবায়ন পরীক্ষার জন্য ফ্যাক্টরি ভিজিটের মাধ্যমে এই কাজটি করা হয়। এর মাধ্যমে ম্যানেজারদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত শিক্ষার সঙ্গে আরও নতুন কিছু শেখার সুযোগ হয়। আমরা তাদের সম্পাদিত প্রতিটি কাজের বিশ্লেষণ ও রিপোর্টিং করি, তারা কোন কোন কাজ ভালোভাবে করেছেন এবং কোথায় কোথায় আরও ভালো কাজ করা সম্ভব তা নিয়ে আলোকপাত করি। আমাদের অন্তর্ভুক্ত সব ফ্যাক্টরির সেরা কাজগুলো সম্পর্কেও তাদের একটা ধারণা দেওয়া হয়। এর ফলে সমগ্র ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে নিয়মিত উন্নয়নের চিন্তাভাবনা আরও সহজ হয়। আমরা এখনও আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের এসএসভি ভিজিট থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ম্যানেজাররা এখন বিভিন্ন কারিগরি ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়ার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন এবং এ দিক থেকে তাদের আরও উন্নয়ন করা দরকার। জনবল ব্যবস্থাপনায় এখনও ঘাটতি আছে। আমরা ম্যানেজারদের অফিসে দেখি যে নানান পলিসি ও নিয়মকানুন থরে থরে শেলফে সাজিয়ে রাখা। তারপর আমরা তাদের জিজ্ঞেস করি যে আপনারা এসব নিয়মকানুন ও প্রক্রিয়া কীভাবে সব কর্মচারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। ম্যানেজার এবং কর্মচারীদের মধ্যে এখনও বিস্তর ফারাক আছে, তবে পরিবর্তনটা ধীরে ধীরে আসছে।

এসএসভি ফ্যাক্টরির ভেতরের যাবতীয় প্রযুক্তির প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বিষয়ে ফ্যাক্টরি ম্যানেজারদের সহায়তা দেয়। এর মধ্যে আছে, প্রতিটি কাজের সুষ্ঠু সম্পাদন নিশ্চিত করার কাজে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সুযোগ্য ইঞ্জিনিয়ারের ব্যবস্থা করে দেওয়া, কোনোমতেই চেকলিস্ট জমাদানকারী একজন অযোগ্য কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার নয় ।

৪। কাজটি সাফল্যের সঙ্গে সম্পাদন করার মন্ত্র কী কী?

আগে থেকে সাবধানতা অবলম্বন এবং সব ধরনের বিপদ ও ঝুঁকির আশঙ্কা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য একটি অবকাঠামো ব্যবহার, এবং তার সঙ্গে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণে শ্রেণীবিন্যাসের ব্যবহার করা। এগুলো ঠিক করার পর প্রতিটি নির্দিষ্ট কর্মস্থলের প্রযোজ্য সকল কাজের ক্ষেত্র পরীক্ষা করা। এই কাজটির জন্য নিরাপন নাইনটি ডে ম্যানেজমেন্ট গাইডেন্স অ্যান্ড রিপোর্টিং প্রসেস (নাইনটি ডে রিপোর্ট) তৈরি করেছে। এই ডকুমেন্টটি ফ্যাক্টরি ম্যানেজারদের একটি কাঠামো দেয়, যার বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা ফ্যাক্টরিতে বিপদের আশঙ্কা নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকির শঙ্কা কমিয়ে আনতে পারে।

নাইনটি ডে রিপোর্ট এবং সেইফটি সাপোর্ট ভিজিট একটি কাঠামো দেয় এবং ফ্যাক্টরির মালিক ও ম্যানেজারদের দিক-নির্দেশনা দেয়, কিন্তু আমরা যদি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহায়তা না দেই, তাহলে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার এই অবকাঠামোটি ঠিকমতো বোঝা যাবে না এবং এর সঠিক ব্যবহার হবে না। এই রিপোর্টিং প্রক্রিয়াটি ফ্যাক্টরির সেইফটি সাপোর্ট ভিজিটের (অডিট নয়) মাধ্যমে প্রতি ১৮ মাস অন্তর অন্তর পুনরাবৃত্তি করা হয়।

ফ্যাক্টরিগুলো কেবল ব্র্যান্ড রিকয়ারমেন্ট পূরণ করলেই সাফল্য আসবে না। এর জন্য প্রয়োজনীয় সচেতনতা বৃদ্ধি ও একটি সেইফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা নিরাপনের অন্যতম উদ্দেশ্য। আর এই লক্ষে পৌঁছানোর জন্য নিরাপন একটি সহযোগী সংস্থার সঙ্গে পার্টনারশিপের ভিত্তিতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্র্যাক নিরাপনের সহযোগী সংস্থা হিসাবে ম্যানেজারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া শেখানোর দায়িত্ব পালন করছে। যার আওতায় ফ্যাক্টরি ওয়ার্কারদের মৌলিক নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ ও জরুরী পরিস্থিতিতে কীভাবে সাড়া দিতে হয় সেটি শেখানোর জন্য প্রশিক্ষকও তৈরি করছে। এই সাড়ার মধ্যে রয়েছে লোকজনকে কীভাবে নিরাপদে বের করে নিয়ে আসতে হয় সে প্রশিক্ষণও। আমরা এই মডেলটিকে ‌’ট্রেইন দ্য ট্রেইনার মডেল’ (TtT) বলছি।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি সহজপ্রাপ্য সম্পদ হচ্ছে নিরাপত্তা রক্ষীরা। তাই আমরা তাদেরকেও নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেই ট্রেইন দ্য ট্রেইনার মডেল অনুসরণ করেই। পরিশেষে আমরা ম্যানেজার ও নির্ধারিত শ্রমিকদের নিয়ে একটি নিরাপত্তা কমিটি গঠন করি। ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা ব্যবস্থার উত্তরোত্তর উন্নয়নের লক্ষ্যে শেষের এই দলটিকেই পরস্পরের সঙ্গে একযোগে বিভিন্ন পলিসি ও প্রক্রিয়া তৈরি ও পালনে কাজ করতে হয়। কাজের প্রক্রিয়া ও পলিসিতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধনের মাধ্যমে ঝুঁকি হ্রাসে একটি নিয়মের মধ্য দিয়ে এই লক্ষ্য অর্জন করা যায়। শেষের এই দলটি এসএমএস ট্রেইনিংয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ম্যানেজারদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মূল অবকাঠামো থেকে পৃথক একটি অংশ হয়ে নয় বরং ব্যবসায়িক ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এ প্রসঙ্গে একটু পরেই আমরা একটি উদাহরণ তুলে ধরবো।

ফ্যাক্টরিগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করে নাইনটি ডে রিপোর্ট পর্যালোচনার সময় নিরাপন ফ্যাক্টরিগুলে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করে কীভাবে কর্মস্থলের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে, শ্রমিকদের কীভাবে এ ব্যাপারে দক্ষ রাখতে পারে, এবং ফ্যাক্টরির প্রতিটি কাজে কীভাবে নিরাপদ প্রক্রিয়া ও বিধিনিষেধ উন্নয়ন করতে পারে – এসব বিষয়ে মতামত দেয়।

আমাদের একটি হেল্পলাইনও আছে (আমাদের কথা হেল্পলাইন)। পরিচয় গোপন রেখে কর্মীরা এখানে নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ে তাদের চিন্তাভাবনা শেয়ার করতে পারে। সহজ করে বলা চলে যে, এটি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় এনেছে এবং এ ক্ষেত্রে নিরাপনের কাজের মান উন্নয়ন (কিউ এ) নির্ধারক হিসাবে কাজ করছে এসএমএস। আমরা এখানে কয়েক দশক ধরে প্রচলিত চিন্তাধারার পরিবর্তন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং একইসঙ্গে উৎপাদনের গতি বাধাগ্রস্ত না করে ব্র্যান্ডের শর্তমোতাবেক সেইফটি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করি।।

হেল্পলাইন সম্পর্কে আমরা শিগগিরি আরও বিস্তারিত আলাপ করবো, কিন্তু তার আগে এই চিন্তাধারার একটি উদাহরণ নিয়ে আলাপ করা যাক, এবং সেখানে আমাদের পূর্বে আলোচিত ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের মাপকাঠি প্রয়োগ করা যাক। এই চিন্তাধারাটি বোঝার জন্য আমরা ফ্যাক্টরির উৎপাদন প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের একটি ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করবো।

ক। ফ্যাক্টরিগুলোর বর্তমান মানসিকতা

রেডিমেইড গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে ক্লিনিং ও ব্লিচিং কাজে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড (H2O2) একটি নিয়মিত ব্যবহৃত উপাদান। পরিশুদ্ধ অবস্থায় (অদ্রবীভূত) এটি বিস্ফোরকভাবে নিঃশেষ হয়ে যায় এবং এটি রকেটের জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এ কারণে এক্সপ্লোসিভস অ্যাক্ট ১৮৮৪ অনুযায়ী এই উপাদান সংরক্ষণের জন্য অনুমোদন লাগে।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে (বিএনবিসি) এ ধরনের উপাদান সংরক্ষণের নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করা আছে। কিন্তু এক্সপ্লোসিভস অ্যাক্ট ১৮৮৪-এর অধীনে পাওয়া সার্টিফিকেটকেই পর্যাপ্ত ধরে বাদবাকী জরুরী কারিগরি বিষয়গুলোকে সাধারণত উপেক্ষা করা হয়। ফ্যাক্টরি ম্যানেজাররাও বলেন, এ বিষয়ে এক্সপ্লোসিভস অ্যাক্টে যেহেতু আর কিছু উল্লেখ নেই, তাই এ নিয়ে তাদের আর কিছু করারও নেই।

আদতে এক্ষেত্রে আরও অনেক ধরনের বিধিনিষেধ ও আবশ্যক বিষয় লিখিত অবস্থায় আছে, এবং নির্দিষ্ট কিছু শর্ত মাথায় রেখেই কেবল এর অনুমোদন দেওয়া হয়।

খ। নিয়ন্ত্রণের শ্রেণীবিন্যাস পন্থা, আমাদের গন্তব্য

বর্জন / অপসারণ – আমাদের কি H2O2 ব্যবহার করার দরকার আছে?

প্রতিস্থাপন – অন্য কোনও উপাদান কি ব্যবহার করা যায়?

প্রকৌশল নিয়ন্ত্রণ (বিইএফএস) – আমরা রাসায়নিক দ্রব্যাদি একটি অগ্নি-নিরোধক জায়গায় সংরক্ষণ করি। উপাদানগুলো দাহ্য বা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলে আমরা স্প্রিংক্লারও বসাতে পারি। কোনো ধরনের ছিদ্র বা উপচে পড়ার ভয় থাকলে ড্রেনেজ সিস্টেমে ইন্টারসেপ্টরের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ – বিভিন্ন ধরনের উপাদান শ্রেণীভেদে পৃথক পৃথকভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারে বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়। রাসায়নিক উপাদানগুলোকে ঝুঁকি অনুযায়ী সংরক্ষণাগার স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা আছে, যেখানে কেবল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং অনুমোদিত কর্মী ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে উপাদানটির সংরক্ষণ, মিশ্রণ, অবস্থান পরিবর্তন ও ব্যবহারের বিষয়ে উপযুক্ত নিয়ম ও বিধিনিষেধ থাকবে। রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার ও নাড়াচাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মচারীরাই কেবল করতে পারবেন। দুর্ঘটনার সম্ভাব্য প্রতিটি ধাপের কথা মাথায় রেখে সেই মোতাবেক এমারজেন্সি ও ফার্স্ট এইডের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিটি দুর্ঘটনার কারণ ও পন্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে যেন পদ্ধতিটির প্রয়োজনীয় ও সাধ্য সব সংশোধন করা যায়, যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়। প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। প্রতি বছর নিয়মিত রাসায়নিক উপাদানগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার প্রশিক্ষণ ঝালাই করে নেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। জরুরী অবস্থার কথা মাথায় রেখে এবং সব কার্যপ্রণালী ও বিধিনিষেধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নতুন পাওয়া যে কোনো তথ্য বিধিনিষেধ ও কার্যপ্রণালীতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(পিপিই) – প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সকল কর্মচারীকে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনের সময় রাসায়নিক উপাদানটির যেকোনো ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। এই পিপিই নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে এবং এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

আমি নিশ্চিত আপনারা একমত হবেন যে, নিয়ন্ত্রণের এই শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতিটি কার্যকর হলে তা যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাবে, বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য গড়িয়ে পড়া , আগুন বা বিস্ফোরণের ঝুঁকি কমিয়ে আনবে । এই চিন্তাধারাটি ফ্যাক্টরির প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে যেন দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ঝুঁকি হ্রাস পায়। নিয়মিত উন্নয়নের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটি সচল রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ।

হেল্পলাইন যে কোনো সমস্যা বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আমাদের খবর দেয়, এবং আমরা সমস্যাটির মূল কারণ ধরতে পারলে তার সমাধান দিতে পারি। এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পার্টনারশিপ যত উন্নত করবো হেল্পলাইন ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কেও ধারণা দিতে পারবে, আমাদের সমস্যা ও সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো সম্পর্কেও আরও বিস্তারিতভাবে জানতে পারব এবং আগে থেকেই সমস্যাগুলোর ধারণা করে তার সম্ভাব্য সমাধান তৈরি রাখতে পারব। এভাবে আমরা আমাদের মেম্বারদের সাবধান করতে পারব এবং সমস্যা আরও গুরুতর হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করতে পারব। আদতে এই কাজটি ফ্যাক্টরিগুলোর নিজে থেকেই করা উচিত, কিন্তু যতদিন পর্যন্ত না আমরা মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারছি এবং ফ্যাক্টরি মালিক ও ম্যানেজাররা নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করাকে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে মেনে নেন, ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং উন্নয়নের ব্যবস্থা করে যেতে হবে।

৫।নিরাপনকোনদিকথেকেঅন্যদেরথেকেআলাদা ?

নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে ইন্ডাস্ট্রিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার কাজে আমরা একটি শিক্ষামূলক পন্থা অবলম্বন করি। এটা অনুধাবন ও ক্রমাগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পুরো ইন্ডাস্ট্রি নিরাপত্তার টেকসই নানান পদ্ধতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। ঝুঁকি মোকাবেলার দায়িত্বটা মালিকদের, এবং এর কার্যকরী নিয়ন্ত্রণও তাদের ওপরই থাকে, ক্রেতার ওপর নয়। এর মানে হচ্ছে একটি ফ্যাক্টরি নিরাপদ না হলে তার নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা মালিক ও ম্যানেজারদেরকে নিরাপদ কর্মস্থল তৈরিতে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও নির্দেশনা দিতে পারি, তাদের ঝুঁকির নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই।

নিরাপনের কথা ভাবলে ওএসএইচএ বা এইচএসই-এর কথা ভাবতে হবে, যা কেবল অবকাঠামোগত নিরাপত্তা নয়, বরং পেশাগত নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে, যার ব্যাপারে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে কথা বলেছিলাম।

৬. মূল্যায়ন এবং সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এরইমধ্যে অনেক সংগঠন ও উদ্যোগ তৈরি হয়েছে। নিরাপন কেন ক্যাপ ক্লোসড ফ্যাক্টরিগুলোতেই গুরুত্ব আরোপ করছে?

অ্যালায়েন্স, অ্যাকর্ড এবং অন্যান্যরা বাংলাদেশে কাজ শুরু করে রানা প্লাজা দুর্ঘটনাটি ঘটার পর। রানা প্লাজার দুর্ঘটনাটি ছিল আধুনিক বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ইন্ডাস্ট্রিয়াল দুর্ঘটনা। এর পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য ছিল পোশাক শিল্পের ব্যবসা অক্ষুণ্ণ রাখা, ব্র্যান্ডদের লক্ষ্য ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা এবং স্বাভাবিকভাবেই এর প্রথম ধাপ ছিল ফ্যাক্টরিগুলোর (কর্মস্থল) নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয়, এটাই ছিলো বিইএফএস-এর (নিরাপন টিএসভি) কাজ, কারণ এর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে বিভিন্ন কাঠামোর উন্নয়ন সাধনে কাজ করা।

এর ফলাফল হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, মেশিন ও মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে ভবন নির্মাণ শুরু হয়। যার মধ্যে আছে বৈদ্যুতিক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিন ও অন্যান্য সরঞ্জামের চাপ বহন করার উপযুক্ত অবকাঠামো দাঁড় করানোর বিষয়। বিল্ডিং থেকে সহজে বের হওয়ার নিরাপদ পথ রেখে আগুনের বিস্তার ঠেখানো ও প্রাণহানী রোধ এর মধ্যে রয়েছে।

এসব কিছু নিশ্চিত করাকেই নিরাপদ কর্মস্থল বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। কর্মস্থলের নিরাপত্তা নির্ভর করে সেখানকার জনবল এবং তাদের কাজের ধরনের ওপর। স্মরণ করুন সেই উশৃঙ্খল ড্রাইভারের কথা, যে কোনও ট্রাফিক সাইন বা গতিসীমা মানে না, নিজের অভিজ্ঞতা বা রাস্তার অবস্থাও আমলে নেয় না। তার চালানো গাড়িতে যতই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকুক, ড্রাইভারের আচরণ ও মানসিকতার কারণে গাড়িটি আশপাশের সবার জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সেই ড্রাইভারের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসা প্রয়োজন, গাড়িতে নয় (গাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া)। একইভাবে কর্মস্থলকে নিরাপদ রাখার জন্য সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক, ম্যানেজার, কর্মচারী সবার সঙ্গে আমাদের কাজ করেই তবে পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।

বল প্রয়োগ নয় বরং শিক্ষার মাধ্যমে মানসিকতার পরিবর্তনে বিশ্বাসী নিরাপন। কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়ে যেমন মাস্ক পরা বা ভ্যাকসিন নেওয়ায় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল, সেভাবেই এখনও মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য মানুষকে বোঝাতে হবে যে তাদের উপকারের জন্যই আমাদের সকল উদ্যোগ। নিরাপনের মূল চ্যালেঞ্জও এটাই। আর ক্যাপ ক্লোজার-কে একমাত্র সমাধান হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে ফ্যাক্টরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রের মূল চ্যালেঞ্জ।

বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন: 
নিরাপন
ইমেল: Info@nirapon.org